Wednesday, October 19, 2016

চলো বেদান্তের পথে...

সৃষ্টির মাঝেই স্রষ্টা বিরাজিত উপনিষদের এই ভাষ্যই হিন্দু ধর্মের মূল কথা । সুতরাং সেই দৃষ্টিতে বেদান্তের তত্ত্বমসি বা তুমিই পরমব্রহ্ম কিংবা অহং ব্রহ্মাষ্মি বা আমিই সেই ব্রহ্ম সত্য । এই অনুভূতিই সর্ব শ্রেষ্ঠ সাধন। এই অনুভূতি লাভ হলে তার আর কিছু করবার প্রয়োজন নেই । কিন্তু এই অনুভূতি কেন আমরা সব সময ধরে রাখতে পারি না, এই  অনুভবের পথে বাঁধা কোথায় ?

বাধা জীবত্ব দশায় । জীবত্ব হলো আমরা যখন আত্মারূপী পরমাত্মাকে কেন্দ্র করে ত্রিগুনা প্রকৃতির মাধ্যমে দেহ ও মন ধারন করি, তখন ত্রিগুন দেহ ও মনকে ব্যবহার করে জগতকে ভোগ করতে নিজ স্বরূপ ব্রহ্ম সত্ত্বাকে ভুলে যায় । এই ব্রহ্ম সত্ত্বাকে ভুলে যাওয়ার নামই অবিদ্যা । সুতরাং যখন  নিজ ব্রহ্ম সত্ত্বা ভুলে বা অবিদ্যায় আকৃষ্ট হয়ে শুধু মাত্র জগৎ ভোগে আমরা আসক্ত হয়ে পরি তখন আমি সাধারন জীবে পরিণত হই। অতএব অবিদ্যায় আমাদেরকে স্বীয় ব্রহ্ম দশা থেকে জীব ভাবে নিয়ে যায় ।

জীব দশা থেকে মুক্ত হয়ে স্বীয় স্বরূপে বা ব্রহ্মভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই আমাদের সাধনা।তবে এর জন্য জগৎ সংসার ছেড়ে যেতে হবে তা ঠিক নয় । কারন এই জগৎ-সংসারের মাঝেই তো তিনি বিদ্যমান। সুতরাং তিনি যেখানে আছেন সেখানেই তো তাঁকে খুঁজে বের করতে হবে। প্রকৃত পক্ষে তিনিই তো আমি । অতএব বেদান্তের অহং ব্রহ্মাষ্মি এবং শ্রী গীতার সর্ব ভূতে হীতে রতা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কারন সর্ব ভূতের মাঝেই তো তিনি বিদ্যমান।

সুতরাং পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আমরা যে জীব দশা প্রাপ্ত হয়েছি তা আমাদের প্রকৃত দশা নহে , ব্রহ্মভাবই আমাদের প্রকৃত অবস্থা । তবে এই জীব দশা থেকে মুক্ত হওয়ার নামই সাধনা।



সাধনা -

জীবন ধারন কিংবা সাধনা কোন ক্ষেত্রেই ভোগকে অস্বীকার করা যায় না। কেননা ভোগকে অস্বীকার করলে নিজের অস্তিত্ব থাকে না। তাই ভোগের ক্ষেত্রে আমাদের মান্যতা ঈশ উপনিষদের সেই মহাবাক্য ভোগ ও ত্যাগের সমন্বয় সাধন। সুতরাং ভোগ নিষিদ্ধ নহে তবে ভোগে সংযমী হতে হবে।

সাধনার ক্ষেত্রে জ্ঞান,কর্ম ও ভক্তির প্রয়োজন। অর্থাৎ তত্ত্ব কে সংশয় শূন্য করতে জ্ঞান প্রয়োজন,সেই তত্ত্বকে পূর্ণরূপ দিতে কর্মের আবশ্যকতা, এবং বিশুদ্ধভাবে অন্তহীন অনুপ্রেরনায় কর্ম সমাধা করতে ভক্তির প্রয়োজন । এই তিনটিকে যোগ সাধনার দ্বারাই একত্রিত করা সম্ভব।

কিন্তু এই যোগ চিত্ত বৃত্তির নিরোধ নহে, চিত্তবৃত্তিকে রূপান্তরিত করা। কেননা যতদিন দেহ ও মন আছে ততো দিন বৃত্তি মুছে ফেলা অসম্ভব । কিন্তু সাধনাও করা প্রয়োজন । তাই চিত্ত বৃত্তির দিব্য রূপান্তর করাই এর সমাধান ।

অতএব পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, ভোগে সংযমী হয়ে চিত্ত বৃত্তির দিব্য রূপান্তর ঘটাতে পারলেই নিজের ব্রহ্ম ভাব পুনরায় ফিরে পাওয়া সম্ভব ।
ওম

No comments:

Post a Comment