Tuesday, October 18, 2016

বেদ হিন্দুর মূল ধর্ম গ্রন্থ

বেদই হিন্দুর মূল ধর্ম গ্রন্থ । কীভাবে বেদ হিন্দুদের মূল ধর্ম  গ্রন্থ তা এখন জানা যাক ।

প্রকৃত পক্ষে হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠিতই আমাদের শ্রদ্ধেয় মহানুভব মনি-ঋষিদের অনুভবের উপর। আর তাঁদের অনুভবের অভিব্যক্তি হলো বেদ। যখন লিখন পদ্ধতিও আবিষ্কার হয় নাই,তখন থেকেই মনি-ঋষিগন মুখে মুখে তাঁরা তাঁদের অনুভবের অভিজ্ঞতাকে শিষ্য পরম্পরায় দিয়ে গেছেন। তখন গুরুর কাছ থেকে শিষ্য শ্রবন করে সেই শিষ্য আবার তাঁর শিষ্যকে বলে গেছেন এবং এই ভাবে বেদ প্রথমে শ্রুত হয়ে বিস্তার লাভ করেন। তাই বেদের অপর নাম হলো শ্রুতি ।

পৃথিবীর ইতিহাসে সব চেয়ে পুরানো গ্রন্থ ঋগবেদকে যদি আমরা লক্ষ্য করি তবে দেখবো যে, আমাদের মনি-ঋষিগন সর্ব প্রথম প্রকৃতিকে অনুভব করেছেন। ঝড়-ঝঞ্জা, রোদ-বৃষ্টি, আলো- রাতের অন্ধকার, গ্রহ-ণক্ষত্র, গাছ-পালা, লতা-পাতা, নদী-নালা, কীট-পতঙ্গ, পাহাড়-পর্বত, পশু, মানুষ সমস্ত প্রকৃতিকে । এই প্রকৃতির শক্তিকে তাঁরা দেবতা রূপে শ্রদ্ধা করতেন। কেনই বা করবেন না,  এ গুলোই তো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রকৃতি ছাড়া জীবন অসম্ভব । প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা ভরে জানাতেই দেবতার উদ্ভব । প্রকৃত পক্ষে তখন কল্পিত দেবতা ছিল না, ছিল বাস্তব দেবতা।

কিন্তু মনি-ঋষিগন শুধু প্রকৃতিকে অনুভব করেই বসে থাকেন নাই। তাঁরা  আরও সামনের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। প্রকৃতির মাঝের শক্তিকে অনুভব করার চেষ্টা করেছেন। তাইতোএই ঋগবেদে ঋষিদের বলতে দেখি সবার মাঝে এক অক্ষয় চেতন শক্তি বিরাজিত, সেই হলো পরম ব্রহ্ম । সুতরাং আমরা দেখছি প্রকৃতিকে অনুভবের মাধ্যমে সেই মহানুভবগন আরও এগিয়ে পরম ব্রহ্ম কে অনুভব করেছেন। অর্থাৎ পরম ব্রহ্ম আর কোথাও নেই এই প্রকৃতির মাঝেই তিনি চেতন সত্ত্বা রূপে বিরাজিত।

সুতরাং মনি-ঋষিগন অনুভব করলেন এই প্রকৃতি ও চেতনাময় পরম ব্রহ্ম দুটোয় আমাদের উপলব্ধির বিষয় । তাই দুটো বিদ্যা রচিত হলো এক অপরা বিদ্যা এবং দ্বিতীয়টি পরা বিদ্যা। অপরা বিদ্যা হলো প্রকৃতিকে জয় করার আর পরা বিদ্যা হলো পরম ব্রহ্ম কে লাভ করার। সুতরাং বেদই হলো সেই বিশাল জ্ঞান ভান্ডার যেখানে অপরা ও পরা বিদ্যা দুটিই বিদ্যমান ।

প্রকৃতিকে জয় করার যে অপরা বিদ্যা তা বিশাল । বেদে অর্থাৎ তৈত্তিরীয় উপনিষদে পাঁচটি ভাগে অপরা বিদ্যাকে  ভাগ করা হয়েছে ।


১) অধিবিদ্যা ।

২) আধ্যাত্ম বিদ্যা ।

৩) অধিলোক বিদ্যা ।

৪) অধিজ্যোতিষ বিদ্যা ।

৫) অধিপ্রজা বিদ্যা ।

অধিবিদ্যার মূল কথা হলো ব্যাকরনাদি জানার মাধ্যমে ভাষা শিক্ষা অর্জন করা, এবং তার সঠিক ব্যবহার করা ।এই ভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করে সবার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করি। তাই ভাষা শিক্ষা আমাদের জীবনের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ।

আধ্যাত্ম বিদ্যা হলো দেহ বিষয়ক বিদ্যা । সুতরাং দেহ ধারন ও তার রক্ষনের জন্য যে কর্ম মুখী বিদ্যা তাই আধ্যাত্ম বিদ্যা । যেমন ডাক্তারী, ইঞ্জিনিয়ারিং সহ বিভিন্ন কর্ম মুখী বিদ্যা ।

অধিলোক বিদ্যা হলো বর্তমানে আমরা যে জগতে বাস করছি সেই জগৎ এবং মৃত্যুর পরের জগৎ সর্স্পকে যে জ্ঞান লাভ হয় তাই অধিলোক বিদ্যা ।

গ্রহ-ণক্ষত্র সর্ম্পকে যে বিদ্যা তাই অধিজ্যোতিষ বিদ্যা । নভোচারিরা এই বিদ্যার মাধ্যমেই গ্রহ ও ণক্ষত্রের অনেক অজানা তথ্য আমাদেরকে দান করছেন এবং জ্যোতিষগন গ্রহ-ণক্ষত্রের অবস্থান বিচার করে আমাদের জীবনের ভুত-ভবিষ্যতও জানিয়ে দিচ্ছেন ।

আর সর্বশেষ বিদ্যা হলো অধিপ্রজা বিদ্যা । নিজের সন্তা-সন্তুতির জন্ম দান করা থেকে শুরু করে, তাদেরকে প্রকৃত মানুষ করা এ্ই বিদ্যার অন্তর গত। এই বিদ্যার প্রভাবেই মানুষ মানুষের সাথে সর্ম্পক কীভাবে গড়বে তা নির্ণয় করে থাকে ।

এ সমস্ত হলো অপরা বিদ্যা আর পরা বিদ্যা হলো  উপনিষদ জাতীয় গ্রন্থ যেখানে আত্মার  স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে । তবে আত্মার অনুভুতিই হলো প্রকৃত পরা বিদ্যা । সেই কারনে অনেকে বলে থাকেন লিখিত সমস্ত  বিদ্যাই অপরাবিদ্যা, শুধুমাত্র আত্মার অনুভবই পরা বিদ্যা ।

অপরা বিদ্যাকে প্রেয় বা প্রিয় বিদ্যা বলা হয় । কেন ? কারন অপরা বিদ্যা বর্তমান অস্তিতবান দেহের উপকারে আসে এবং আমরা তার দৃশ্যমান সুফল পাই । কিন্তু পরা বিদ্যা আত্ম বিষয়ক বিদ্যা যার দ্বারা দৈহিক কোন উপকার পাওয়া যায় না, জন্য এটি অনেকটা কম প্রিয় । তবে শাস্ত্র একে শ্রেয় বলেছেন । কেননা, দেহের সমাপ্তি হলে সর্বশেষে আমাদের আত্মাতেই পরম গতি লাভ হয় । তাই পরা বিদ্যা শ্রেষ্ট বিদ্যা ।

মুন্ডক উপনিষদে অঙ্গিরস ঋষি গৃহস্থ শৌনক কে বলেছিলেন হে শৌনক যদি তুমি পরম গতি লাভ করতে চাও তবে পরা ও অপরা এই দুটি বিদ্যাই তোমাকে অর্জন করতে হবে  আর বেদ এই দুটি বিদ্যা নিয়েই আলোচনা করেছেন ।

এই বেদ থেকে গবেষনা করে আমাদের জীবন-যাপনের জন্য বিধান গ্রন্থ মনু, পরশর, ব্যাস বিভিন্ন সংহিতা গ্রন্থ রচিত হয়েছে । এদের মধ্যে মনু সংহিতা হিন্দুদের প্রধান বিধান মালা যেখানে আমাদের সমাজনীতি, রাজনীতি, কুটনীতি থেকে শুরু করে সমস্ত ইহ জাগতিক জীবন প্রনালীর প্রক্রিয়া বর্ণিত আছে । আমাদের ভুললে চলবে না এদের মূল ভিত্তি বেদ ।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে বেদ একটি এমন গ্রন্থ যেখানে ইহজগৎ ও পরজগতের সমস্ত সমাধান রয়েছে । হিন্দুধর্মে এ রকম আর দ্বিতীয়টি কোন গ্রন্থ নেই যা বেদের সাথে তুলনীয় । অতএব বেদই হলো হিন্দুদের মূল ধর্ম গ্রন্থ ।

ওম

No comments:

Post a Comment