Friday, October 14, 2016

হিন্দুত্ববাদ কী এর উৎপত্তি এবং প্রয়োজনীয়তা

প্রথমে জানা প্রয়োজন হিন্দুত্ববাদ কী?

সমগ্র হিন্দুজাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও তার বিকাশের যে মতবাদ তাই হিন্দুত্ববাদ। অর্থাৎ এই জাতির অস্তিত্ব রক্ষা এবং তার বিকাশের জন্য যে যে কর্ম করা প্রয়োজন সেই কর্ম প্রক্রিয়ার যে গাইড লাইন তাই হিন্দুত্ববাদ।

হিন্দুত্ববাদের বিষয় দুটি-

১) আমাদের বাহ্যিক আচার-আচরন, শিল্প, সাহিত্য ও সংষ্কৃতি। খুব সংক্ষেপে আমাদের হিন্দুদের সমাজ ব্যবস্থা।

২) আধ্যাত্মিক দর্শন।

হিন্দুর সমাজব্যবস্থা


হিন্দু ধর্ম বাইরে থেকে আগত কোন ধর্ম নয়। এ ধর্ম সৃষ্টির সাথে সাথে এই ভারতীয়  উপমহাদেশেই উৎপত্তি লাভ করে। পরে ভারতীয় মনি-ঋষিদের বিশুদ্ধ ও গভীর  চিন্তা-চেতনার ফসল বেদের মাধ্যমে তা বিস্তার লাভ করে সুসংগঠিত একটি ধর্মর রূপ নেয়, যা  আজ সনাতন বা হিন্দুধর্ম নামে পরিচিত।
যেহেতু হিন্দুধর্ম এই দেশেই উৎপত্তি এবং আমরাও হিন্দুরা এই দেশেরই বাসিন্দা তাই হিন্দুর শিল্প, সাহিত্য, সংষ্কৃতি, আচার-আচরন, সমাজ ব্যবস্থা সমস্ত কিছু আমাদের নিজস্ব ভারতীয়। এ সমস্ত কিছু আমাদের ডিএনএ তে এবং রক্তের সাথে মিশে আছে। এগুলি  আমাদের  নিজস্ব  এবং  এই গুলিই   আমাদের  জীবন। এই  আমাদের  নিজস্ব ভারতীয় সংষ্কৃতির  মাধ্যমে হিন্দুধর্ম টিকে  থাকে। তাই  হিন্দুধর্মকে টিকে  রাখতে  চাইলে  সবার আগে সংষ্কৃতির  ধারক হিন্দুকে  হতেই হবে।
আমাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যা-খাদ্য, বিভিন্ন উৎসব, দশ বিধি সংষ্কার এই সমস্ত কিছুর মাধ্যমেই হিন্দুদের সংষ্কৃতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ সমস্ত কিছু বেদের কর্ম কান্ডে বর্ণীত আছে। অর্থাৎ বেদের কর্ম কান্ড অনুযায়ীই হিন্দুরা যুগ যুগ ধরে তাদের সংষ্কৃতি পালন করে আসছে। এই সকল সংষ্কৃতিই যখন অতি শ্রদ্ধার সাথে পালন করা হয় তখন তাই ধর্ম হয়ে যায়।


হিন্দুর আধ্যাত্মিক দর্শন

হিন্দুর আধ্যাত্মিক দর্শন অতি উচ্চ।  আমরা উপনিষদ থেকেএই সুউচ্চ বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করতে পারি। উপনিষদের মূল সুরই হলো পরমব্রহ্ম  আত্মারূপে সর্বত্র বিরাজিত। অর্থাৎ উপনিষদই প্রথম ও শেষ গ্রন্থ যেটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে সকল জীবকেই ঈশ্বর রূপে ঘোষনা করেছেন। পরিষ্কারভাবে বলতে হয় আমরা এই জগতে যে জীব দেখছি এ প্রকৃত পক্ষে ব্রহ্মই। ব্রহ্মই সমস্ত কিছু হয়েছেন। অর্থাৎ ব্রহ্ম স্বয়ং এই জগৎ এবং জীবরূপে তিনি নিজেকে বিকশিত করেছেন। তাই নিজেকে সমস্ত কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত করে ঈশ্বরের মতো পবিত্র বা বিশুদ্ধ করে সদা সর্বদা আত্ম সত্ত্বায় স্থির থাকো্। তোমার মধ্যে যেমন আত্মারূপী ব্রহ্ম আছেন অপর সকল জীবের মধ্যেও সেই একই আত্মারূপী ব্রহ্ম বিরাজিত। তাই জীবের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা হয়ে থাকে। অতএব উপনিষদের বানী হলো নিজেকে বিশুদ্ধ ঈশ্বরীয় আত্ম সত্ত্বায় স্থির রেখে নিজের সহ সকলের মঙ্গল সাধনায় ঈশ্বরীয় কর্ম মনে করে ইহজাগতিক প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদন করো।
যদি শুধু নিজের মঙ্গল কামনায় ভোগের আসক্তি নিয়ে কর্ম করো তবে সেই  আসক্তির ফল ভোগ করার জন্য পুনঃ জন্ম নিয়ে আবার পৃথিবীতে তোমাকে আসাতে হবে। এই হলো জন্মান্তরবাদ এবং জীবের আবদ্ধতা। আর নিজের ভোগ-বাসনার নিমিত্তে নয়, ঈশ্বরীয় কর্ম মনে করে নিজের ভোগ-বাসনায় মত্ত না হয়ে জীবের সেবায় কর্ম করলে মুক্তি লাভ হয়। অর্থাৎ তার আর পুনঃ জন্ম হয় না।


হিন্দুত্ববাদের উৎপত্তি

হিন্দুধর্ম এর উৎপত্তির সময় হিন্দুত্ববাদের উদ্ভব হয় নাই। কারন তখন দ্বীতিয় কোন ধর্মই ছিল না। তাই হিন্দুত্ববাদের প্রয়োজন হয় নাই।
এছাড়াও হিন্দুর আধ্যাত্মিক মতবাদে কোন বিশেষ শ্রেনীর মানুষকে স্বর্গীয় মানুষ রূপে বিবেচনা করা হয় নাই। হিন্দুর আধ্যাত্মিক মত হলো সকল জীবের মধ্যেই পরম ব্রহ্ম বিরাজিত। আরও পরিষ্কার কথা ব্রহ্মই সমস্ত কিছু হয়েছেন। তাই হিন্দুরা অন্য জাতির মানুষকে ব্রহ্ম ভিন্ন অন্যরূপে দেখেন না। তাই হিন্দুর আধ্যাত্মিক দর্শন অনুযায়ী হিন্দুত্ববাদের এখনও প্রয়োজন নেই।
কিন্তু ম্যান মেড ধর্ম মত গুলো যখন নিজের অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বেপড়োয়া হয়ে উঠলো এবং হিন্দুর সংষ্কৃতি ও আধ্যাত্মিক দর্শনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দিয়ে আমাদের ধর্মকে ধ্বংস করতে লাগলো তখনি দেখা দিল হিন্দুত্ববাদ। যেহেতু নিজেকে রক্ষা করা এবং নিজের উন্নতি সাধনের অধিকার সবার আছে সেই অধিকারের আইন মাথায় রেখেই হিন্দুত্ববাদের জন্ম হলো।

তবে একটি কথা পরিষ্কার করে বলি, হিন্দুত্ববাদ মানে অপর কোন ধর্মকে  আঘাত করা নয়, বরং হিন্দুরা সকল ধর্মকে সমান ভাবে শ্রদ্ধা করে। তবে যেহেতু বহুদিন ধরে হিন্দুধর্ম নিজের অস্তিত্ব রক্ষার হুমকিতে পরেছে তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্যই হিন্দুত্ববাদের জন্ম।


হিন্দুত্ববাদের প্রয়োজনীয়তা

যুগের চাহিদা অনুযায়ী হিন্দুধর্ম এ এখন হিন্দুত্ববাদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কারন আমাদের অনেক ছেলে-মেয়েরাই হিন্দুধর্মকে সঠিকভাবে না জানার জন্য আজ ধর্মান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। তাই আমি প্রত্যেক হিন্দুকে বিশেষ করে যারা পিতা-মাতা হয়েছেন তাদেরকে  আহ্বান করবো  আপনারা নিজেরাও হিন্দু সংষ্কৃতি ও আধ্যাত্মিক দর্শনকে বুঝুনএবংমানুন ও আপনাদের সন্তান-সন্তুতিদেরকে হিন্দু ধর্ম মতকে শিক্ষা দিন। এটিই হিন্দুত্ববাদ। এটি আপনাকে ধ্বংস করবে না, বরং এটি আপনার ধর্ম ও সম্মান উভয়ী রক্ষা করবে।

No comments:

Post a Comment