Friday, June 23, 2017

সাধনার তিনটি স্তর

আমাদের সাধনার তিনটি স্তর। বহিরাঙ্গ, অন্তরাঙ্গ ও অন্ততরতম অঙ্গ। প্রত্যেকটি স্তরই অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

ক) বহিরাঙ্গ সাধনা: ঘটা করে বিভিন্ন পূজা-পাঠ, হরিবাসর, ভক্তসেবা ইত্যাদিকে আমরা বহিরাঙ্গ সাধনা বলতে পারি। এতে করে সংসার জীবনে ব্যস্ত লোক প্রাথমিক স্তরে ধর্মের সংস্পর্শে আসতে পারে। এ রকম অনুষ্ঠান থেকে তারা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারে এবং ধর্ম মান্য করতে রুচী জন্মে। সুতরাং ধর্ম পালনে রুচি জন্মাতে বহিরাঙ্গ সাধনা অতীবো গুরুত্বপূর্ণ।

খ) অন্তরঙ্গ সাধনা: ত্রিসন্ধ্যা পূজা, বিভিন্ন ব্রত, উপবাস, মন্ত্র জপ এগুলো অন্তরঙ্গ সাধনা। এই সাধনার ফলে মানুষের মধ্যে আস্তিকতা বৃদ্ধি পায় এবং নশ্বর আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে পরমাত্মার প্রতি আর্কষিত হয়। এই সাধনা দ্বীতিয় ধাপ এবং মনুষ্য জীবনে অতীবো প্রয়োজন।

গ) অন্তরতম অঙ্গ সাধনা: সমগ্র কামনা-বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে ধ্যান যোগে পরমাত্মার সাথে যোগযুক্ত হওয়াই হলো অন্তরতম সাধনা। শুধুমাত্র এই সাধনার দ্বারাই মানুষ পরমাত্মার সাথে একাকার হয়ে যায়। মানুষ সকল প্রকার আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে এক পরমানন্দময় জীবন লাভ করে। এই হলো মনুষ্য জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি।

এই তিনটি হলো হিন্দুদের সাধনার স্তর। মনে রাখতে হবে ব্যক্তি বুঝে সকল স্তরেরী গুরুত্ব অপরিসীম। কাউকে ছোট বা বড় বলার প্রয়োজন নেই, নিজ নিজে অবস্থায় সবাই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে বহিরাঙ্গ থেকে সাধনা শুরু হয় এবং অন্তরতম অঙ্গে এসে তার সমাপ্তি হয়। 


ওম 

Sunday, June 18, 2017

সনাতন ধর্ম এ মুক্ত চিন্তা

সনাতন ধর্ম মুক্ত চিন্তার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই সনাতন ধর্ম এ আজ পর্যন্ত কোন প্রকার বোর্ড বা কাউন্সিল নেই যা হিন্দু ধর্মকে নিয়ন্ত্রন করবে। বরং বহু মুনির বহু মতের উপনিষদ হিন্দু ধর্মর মূল গ্রন্থ রূপে আজও বিবেচিত হয়।

কিন্তু মুক্ত চিন্তা বলতে আমরা কী বুঝি ? সাধারনত গতানুগতিক চিন্তা ধারার বিরুদ্ধে কথা বলাই মুক্ত চিন্তা। কিন্তু এটি উপযুক্ত সংজ্ঞা নহে। এ ক্ষেত্রে আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বক্তব্যকে শ্রী গীতা থেকে গ্রহন করতে পারি। অনাসক্ত ভাবে চিন্তা করার নামই মুক্ত চিন্তা।

এই অনাসক্ততা কী ? ভগবান পরিষ্কার করে বলেছেন, কাম, ক্রোধ ও ভয়ের বেগ থেকে মুক্ত হয়ে জীবন-যাপন করার নামই অনাসক্ততা যাকে মুক্তও  বলা হয়। আর এই মুক্ত আবস্থায় যে চিন্তা তাই মুক্ত চিন্তা।

এই পৃথিবীতে সবাই আমরা কোন কামনা বা কারোর প্রতি প্রতিশোধ নিতে কিংবা কারোর ভয়ে কর্ম করে থাকি। আর সেই কামনা বা ক্রোধ বা ভয়ের প্রভাবেই চিন্তাও করে থাকি। কিন্তু একবার বিশুদ্ধ ভাবে ভাবুন তো কোন কামনা নিয়ে কিংবা কোন ক্রোধ বা ভয়ে সঠিক চিন্তা করা যায়। কিন্তু এটাই আমরা করে থাকি। তাই ভগবান বলেছেন কাম, ক্রোধ ও ভয়ের বেগ থেকে মুক্ত হয়ে অনাসক্ত অবস্থায় কর্ম করতে হবে।

কিন্তু এই অনাসক্ত হওয়ার উপায় কী ?  ভগবান বললেন, নিজের বিকারী মনকে ভ্র-যুগলের মাঝখানে স্থির করে স্বীয় নির্বীকার আত্মার সাথে মনকে একাকার করে দাও। নির্বীকার আত্মার গুনে তোমার মনও নির্বীকার হয়ে যাবে। আর যখন মন নির্বীকার হয়ে যাবে তখন তুমি অনাসক্ত হতে পারবে।

কিন্তু আজকাল হিন্দু ধর্মর লোকজনও মুক্ত চিন্তা থেকে অনেক দুরে সরে গেছেন। ধর্ম হয়ে গেছে কিছু নিয়ম-কানুনে আবদ্ধ হওয়া। হতে পারে এ অজ্ঞ লোকের জন্য উপযুক্ত কিন্তু একই বিধান তো জ্ঞান চর্চকারীদের ঘারেও চেপে দেওয়া হচ্ছে। ফলে হিন্দু ধর্মর মূল দর্শন থেকে আমরা বহু দুরে সরে যাচ্ছি।

প্লিজ হিন্দু ধর্মকে বুঝুন, উপলব্ধি করুন এর মর্ম কথাকে। মনে রাখবেন মুক্ত হওয়াই হিন্দু ধর্মর মূল কথা।
ওম

Wednesday, February 1, 2017

সনাতন ধর্মের অক্ষয় তত্ত

আমরা সাধারনত বলে থাকি সনাতন ধর্ম অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। আসলে এর ভিত্তি কতখানি ? আদৌ কী এর কোন ভিত্তি আছে না এ শুধু আমাদের ধ্বংসের আগে বৃথা মানসিক রোগীর প্রলাপ ? আমরা তার ব্যঅখ্যা খোঁজার চেষ্টা করি। 

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্থান যা এককালে অখ্ন্ড ভারত ছিল এবং যেখানে শুধুমাত্র এই সনাতন ধর্মের লোকই বসবাস করতো সেখানে এখন প্রায় হিন্দু বা সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকের সংখ্যা  শেষের দিকে। তার মানে অতি স্পষ্ঠ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান এর হিন্দু আজ সমাপ্ত। অর্থাৎ সনাতন ধ্বংস হচ্ছে । তারপরেও আমরা কেন ও কীসের ভিত্তিতে বলে থাকি, সনাতন আছে, ছিল ও থাকবে। তবে এ কী মিথ্যা ? কারন খোঁজার চেষ্ঠা করি। 

প্রকৃত পক্ষে সনাতন ছিল, আছে ও থাকবে এ কথা শতভাগ সত্য। কিন্তু সনাতনের মূল কথা না জেনে শুধু অজ্ঞানীর  মতো সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ভবিষ্যত বানী করলে পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই বলে বিবেচিত হবে না।আমাদেরকে সনাতনের মূল সত্তাকে উপলব্ধি করতে হবে। 

কী সেই সনাতনের মূল সত্তা ?

বেদ ও পুরান থেকে হিন্দুধর্মের মূল সত্তাকে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা যে আর্য ঋষিগন হিন্দু ধর্মকে সূসংগঠিত করে সমগ্র বিশ্ব বাসীর জন্য আদর্শ জীবন পদ্ধতী রূপে প্রচার করেছিলেন তাঁদের চিন্তা-চেতনার ফসল বেদ ও পুরানের মাধ্যমে তাঁরা দিয়ে গেছেন। কী আছে এই বেদ ও পুরানে ?

প্রথমে আমরা বেদ কে নিয়ে ভাবি-বেদে কী আছে ?

বেদের প্রথম কথা এক ঈশ্বরীয় দিব্য শক্তি বহু রূপে প্রকৃতির মাঝে ক্রিয়াশীল আছে এবং আমাদের জীবনের উপর তাঁর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। সুতরাং যদি আমরা এই প্রপৃতির মাঝে জীবন-ধারন করতে চাই তবে সেই শক্তি গুলোকে চিনতে ও বুঝতে হবে। আর্য ঋষিগন সেই প্রাকৃতিক শক্তি চিনে ও বুঝে সেই শক্তিকে মানুষের ব্যবাহার উপযোগী করে তোলার জন্য বিভিন্ন দেবতার নাম দিতেন ও তাদের পুজো করতেন। এই পুজা বা যজ্ঞের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাকৃতিক অফুরন্ত শক্তিকে নিজের অনুকুলে ব্যবহার করে জীবনে সফলতা লাভ করা। 

পুরানে কী আছে ?

পুরানে আমরা দেখছি বিভিন্ন অবতার পুরুষের কর্ম ও তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। তাঁদের কর্র্মের মধ্যে পরে সাধুদের প্রতি প্রেম ও অসুরদের প্রতি দমন এবং সকল মানুষকে প্রকৃত ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করা। আর তাঁর এই সৃষ্টি রক্ষার অপরিহার্য কর্মের জন্য তাঁকে জানায় আমাদের শ্রদ্ধা। তিনি হয়ে যান আমাদের ভাগ্য বিধাতা ঈশ্বর। 

সুতরাং বেদের জ্ঞান ও পুরানের কর্মর উপর ভিত্তি করেই সনাতন ধর্মের অক্ষয় তত্ত প্রতিষ্ঠিত। অতএব আপনি যতখানি বেদের সেই জ্ঞান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে জীবন-যাপনের কাজে লাগানো এবং পুরানের সেই কর্ম বাদ দুষ্টের দমন, সাধুদের পালন ও ধর্ম সংস্থাপন করতে পারলে তবেই আপনার সনাতন টিকে থাকবে। তাই বলতেই হয় আপনি যত খানি বেদ ও পুরানকে মানবেন আপনি ততখানি সনাতনকে রক্ষা করতে পারবেন। এছাড়া আপনি যদি শুধু মালা জপের মতো সনাতন ছিল, আছে ও থাকবে বলে মালা জপতে থাকেন, এ আপনার পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই না।  

ওম